Posts

Showing posts from July, 2019

আবৃত্তির কবিতা - ২

পানপাতায় কাজল গ্রামের ঝাপান, জমজমাট মেলা ছোটো বেলায় একটি কাজল পেনসিলের জন্য মায়ের কাছে কেঁদেছিলাম দু বছর দু টাকা মাত্র দাম তবুও মা কিছুতেই কিনে দেয়নি। বলেছিল, বাড়িতে প্রদীপের সলতে পুড়িয়ে পান পাতায় কাজল পেতে দেবো ওতে চোখ পরিষ্কার হবে। দিয়েও ছিল তাই, আমি পরিনি ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম পানপাতাটা আমার তখন কাজল পেনসিলই চাই । মাকে বলেছিলাম, তুমি খারাপ মা! কিচ্ছু কিনে দাও  না। সবার কাজল পেনসিল আছে শুধু আমার নেই। মা রাগ করতো না, কেবল হাসতো ওই হাসিটা আমার আরো অসহ্য লাগতো সেদিন সারাদিন রাগ করে ভাত খাইনি। রাতে ভাত মেখে গোল গোল করে মা খাইয়ে দিয়েছিল বলেছিল, মায়ের কাছে দু টাকা নেই। আমি বিশ্বাস করিনি। বলেছিলাম, তুমি তো অনেক বড় আর বড় মানুষদের কাছে টাকা থাকে মমতার মায়ের কাছেও কত টাকা থাকে মা কিছু বলেনি, চুপ করেছিল ভাঙা মেলাতে মায়ের কাছে আর একবার বায়না করলাম বললাম, দেড় টাকা দিলেই ওরা দিয়ে দেবে তবুও মা উঠোন ঝাঁট দিয়েই গেলো যেন প্রধান মন্ত্রী আসবে আমাদের বাড়িতে আমি চিল চিৎকার করে বললাম, ভাঙা ঘর  দিন রাত কেবল বোকার মতো উঠোন পরিষ্কার করো মা তবুও চুপ, মেলা উঠে গেল ভুলে গেলাম কাজল পেনসি

রিং টোন

Image
তুমুল কথার ঝড় উঠেছে শিল পড়ছে, বাজ পড়ছে                                  সাথে এলোমেলো হাওয়া তুমি কেটে দিলে ফোনটা তিন বার টুং টুং টুং এইটুকুই ঘটনা  প্রশ্নপত্রে প্রসঙ্গ লিখতে দিলে পরীক্ষার্থীরা খাতায় লিখতো মেয়েটি চিৎকার করে বলেছিল, আমাকে কক্ষনো ফোন করবে না ! রাগে হতাশায় ফোনটা কেটে দিয়েছিল ছেলেটি যদি অন্তনির্হিত অর্থ লিখতে দিয়ে একের বদলে নম্বর তিন দিতাম পরীক্ষার্থীরা লিখতো মেয়েটি যতবার ফোন করতে নিষেধ করেছিল আসলে ততবার ভিতরে ভিতরে বলেছিল হাজার শব্দদূষণের মধ্যে কেবল তোমার স্বরটুকু আমাকে বাঁচিয়ে রাখে আমাকে ফোন কোরো না কক্ষনো মানে, আমাকে আমৃত্যু ফোন কোরো আমি ফোন না তুললেও যেন রি‌ং হয় অনন্তকাল।

সুখস্রোত

Image
দুঃখস্রোত হলে আমি ধরতাম তার হাত টেনে নিতাম ডাঙায় আশ্বাস দিয়ে বলতাম পাশে আছি, অতনুদা এ যে সুখস্রোত,                           তাই ভাসতে দিলাম আমি রইলাম চুপ করে তটে দাঁড়িয়ে জাহাজটা ডোবার অপেক্ষায় ডুবতে ডুবতে যখন মাস্তুল মিলিয়ে যাবে জল ভরবে বুকের পিঞ্জরে তখন ও বুঝবে ভুয়ো খ্যাতি শুধুই ক্ষতি করে

ইচ্ছেমরণ

Image
তোমার ভালো লাগতো না                     তাই আমি ইচ্ছে করেই                              হারিয়ে ফেলেছি                                               নাকের সোনা তুমি শীত ভালোবাসো না                তাই আমি ছেড়ে দিয়েছি                                আর-বছরের শোয়েটার                                                          আধবোনা

সবুজের সমারোহে

Image
হে অরণ্য, তোমার যত্নের আতিশয্যে আমি সুন্দর হয়ে উঠি প্রভাতের সূর্যের মতো লাল হয়ে উঠি যত বার নিজেকে গোছাই পরিপাটি করে চোখ ঠোঁট উপছে ওঠে তারুণ্যে আয়নার সামনে দাঁড়ালে দেখি, আমি নয় বন হেসে উঠছে আনন্দে আমি নেই কোত্থাও আয়নাতে নয়, চিরুণিতে নয় তোমার সবুজে সবুজে মিশে গেছে আমার সূর্য ওঠার রঙ।

বৃষ্টি ফিরিয়ে দাও

Image
এখানে বৃষ্টিহীন ভীষণ গুমোট দম বন্ধ হয়ে আসে হঠাৎ হঠাৎ সম্পর্ক ভেঙে বেরিয়ে গেছে                                                                প্রাক্তন ফেরৎ দিয়েছে সব                                                                চিঠিপত্র ধার নিয়েছিল বৃষ্টি কিন্তু ফিরিয়ে দেয়নি

প্রেমের কবিতা -২

Image
শ্রাবণে স‍্যার, শুনতে পাচ্ছেন? একদিন আমার খাতা না নিয়ে আপনি নয়নার খাতায় সমাস বুঝিয়েছিলেন সেদিন সারারাত আমি যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারিনি। সত্যি বলছি স্যার ! আপনার স্ত্রী চা দিতে আসেন আমি কতবার পেনের নিবটা ইচ্ছে করে নিজের আঙুলে ফুটিয়ে রক্ত বার করেছি আপনি টের পাননি। আপনার পড়ার ঘর, সিঁড়ি দিয়ে নাবার সময় কত বার আপনার বেডরুমে লুকিয়ে উঁকি ঝুঁকি আপনি জানেন না। কত বার ভেবেছি দেওয়াল থেকে আপনাদের যুগল ফটোটা ফেলে ভেঙে দিই সাহসে কুলাইনি। আপনার হারিয়ে যাওয়া অ্যাশট্রেটা আমার কাছে আছে স্যার ! পড়াতে গিয়ে প্রথম যেদিন কাঁধ চাপড়ে বলেছিলেন, তুমি সত্যিই সাহিত্যে ভালো ! আমার ভিতরে একঝাঁক নীলকন্ঠ পাখি উড়ে গিয়েছিল দূরে আপনি পড়াতে পড়াতে বোতল থেকে জল খান বিন্দু বিন্দু জল আপনার ঠোঁটে শিশিরের মত লেগে থাকে আমি কতবার মনে মনে সেই শিশির পান করেছি আপনি জানেন না স‍্যার ! গেল বছর শ্রাবণে সন্ধ্যা বেলায় আকাশ ভেঙে প্রবল বৃষ্টি কেউ পড়তে এলো না, কেবল আমি একলা কিছুতেই বৃষ্টি থামে না! ভেবেছিলাম আপনি আমাকে বাড়ি ছেড়ে দেবেন আপনি শুধু একটা ছাতা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, সাবধানে যেও ! ভিতরে একটা মোচড় দিয়েছিল দুচোখে শ

আবৃত্তির কবিতা - ১

যন্ত্রের ভিতর বাড়ি যন্ত্র সর্বস্ব হয়ে পড়েছি। কতদিন খালি পায়ে ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটা হয়নি। কতদিন নিজের কাছে ফেরা হয়নি। কতদিন কি-প্যাড ছেড়ে আঙুলে পেন পেনসিল নেওয়া হয়নি। কতদিন নিজের অশ্রুগুলোকে গোছানো হয়নি অথচ শেষ বর্ষা যখন এসেছিল, তখন বুকের মধ্যে আতরের গন্ধ ছিল আসলে অপেক্ষা বড় সুগন্ধী বিষকেও সুরভিত করে তোলে। কখন যে ঘর বাঁধার নামে নিজের চারপাশেই দেওয়াল তুলে গেছি টের পাইনি। আজ একদণ্ড নড়ার জো নেই, যে পাশেই ফিরি দেওয়াল। শেষ ইটটা শুধু গাঁথা বাকি। দেওয়াল ভেঙে কি বেরিয়ে যাবো? বজ্রপাতের শব্দকে তোয়াক্কা না করে, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আর একবার কি ফিরে যাবো শৈশবে? ঝাপিয়ে পড়বো বালাসনের পুকুরে, ডুব সাঁতারে খুঁজে নেবো জটাদেবীর পাতাল ঘর। ততক্ষন পর্যন্ত ডুবে থাকবো যতক্ষন না মা লাঠি নিয়ে আসে।