Posts

Showing posts from October, 2022

সূর্যাস্তে

সূর্যাস্তে আমার অনিচ্ছেই বেলা বয়ে যায় সেতু পেরিয়ে ইচ্ছাময়ীর মন্দিরের চুড়োয় আমি থেমে গেছি বহুদিন, জ্যোৎস্না ভাঙা ঝর্ণার জলে আমার পায়ের পাশে যেদিন ডুবে গিয়েছিল শীতকাল তবু কোন ষড়যন্ত্রে গ্রীষ্মকালীন ফুল ফোটে, প্রতি সূর্যাস্তে বয়স বেড়ে যায়। আবাহন প্রিয় মানুষ ছেড়ে গেলে এমনকি মারা গেলেও প্রকৃতিতে কোনো বদল আসে না! সূর্য ওঠে অস্ত যায়, ফুল ফোটে ঝরে যায়, নদী বয়ে যায় মোহনার দিকে, সব নিয়ম মতো চলে! আমাদের জীবনটাই শুধু শূন্যস্থান পূরণের জন্য বৃথা হাহাকার করে মরে। সব শূন্যস্থান পূরণ হয় না  জেনেও মন ব্যথা পেতে বার বার কাঁটা বনে হেঁটে আসে। চিহ্ন বহুদিন ভেসেছিলে তুমি আমার চেতনাতে নরমটুকু ছুঁয়েছিলে কাঁটার মতো, ব্যথা হতো তবু টের পেতাম তুমি আছো আমাকেই বিঁধে শিকড় ছিঁড়ে কেউ উপড়ে নিল তোমায় আমার কেবল ব্যথার স্মৃতি রইলো জেগে। ভ্রম শব্দ জমাট বেঁধে পাথর আর কথা জমে পাহাড় হয়েছে তাই বহুদিন কবিতা নয় চলছে ঝর্ণা খোদাই পর্ব। উন্মুক্ত ঝর ঝর এসে বলে যায়, পতনের ব্যথাগুলো গুনতে শেখো, ওইটিই আসল অঙ্ক।

হেমন্তের দিনগুলো

  হেমন্তের দিনগুলো হেমন্তের দিনগুলো শোকময় যেদিকে তাকাই শুধু অনন্ত বিচ্ছেদ! আমিও কি বেঁচে আছি? টের পাই না আর জীবন আকুতি কবে কোন ধুলোয় মিলিয়েছে মনে নেই সে কথা! চোখগুলো মরা মাছের মতো নির্জ্বল পারলে তুমিই কানকো উল্টে একবার দেখে নিও জীবন বাকি আছে কি না! ছুটি হাত আলগা করে দিলাম যেতে পারো তুমি যতদূর চাও ক্লান্ত হলে নদীর ছায়ায় বিশ্রাম নিও আমিই পাশ দিয়ে বয়ে যাব নদী হয়ে তৃষ্ণা পেলে এক আঁজলা জল পান করে নিও। জীবন-মৃত্যু জীবন মৃত্যুর কিনার আমি দেখেছি দূর অবধি জল।, কোনো সাঁকো থাকে না শরীর মন এতটাই বাধ্য যেন পুতুল নাচের আসরআ পন পর কেউ কোত্থাও নেই। অদৃশ্য ঘড়ির দোলন, শশব্যস্ত কিছু ছায়া চলাফেরা করে। মাঝে মাঝে চোখ কপালে ওঠে বিকার আসে পুরোনো বিছানা খুঁজে খালি হাতে ফিরে যায়। শবদেহ বিয়োগ শিখছি নিরন্তর ছোটোবেলায় দাগ মুছে এখন শোক গিলে বিয়োগ বুজছি ভীষণ ভালো জীবন থেকে আয়ু মুছলে কি আর পড়ে থাকে? শুধুমাত্র শবদেহ! শালুক ফুল  মনে মনে একশো বার ডাকার পর তবেই তোমার জানলা অবধি আসতে পেরেছি, শালুক ফুল। কাঁপা কাঁপা গলায় অতি ক্ষীণ স্বরে তোমাকে একটি বার ডাকতে আমার যে কত লক্ষ বছর পার হয়ে যায় তা যদি টের পেতে, অমন রূঢ়ভাব

বৃষ্টি, নদী আর ঘাসফড়িং

বৃষ্টি নদী আর ঘাসফড়িং  বৃষ্টি আর নদী দুজন চিরকালের বন্ধু। রাত গভীর হতেই বৃষ্টি ঘুমিয়ে পড়লো। ওর ঘাসের বিছানা পাতা তাই ঘুম এলো সহজে। নদীও ক্লান্ত ভীষণ, ঘুমিয়ে পড়লো চেনা অববাহিকায়‌। বৃষ্টি কথা রেখেছে ছুঁয়েও দেখেনি নদীর বুক, টেনে দেয়নি ঘুমন্ত নদীর গায়ে ছাপা ফুলের চাদর।নদীকে দিন-রাত  বইতে হয় সংসারের জল তাই তার রাতই আসে দুচোখে ঘুম নিয়ে। বৃষ্টি ঘুমালো, নদী ঘুমালো। কিন্তু অলক্ষে একটা ঘাস ফড়িং জেগে ছিল ওর ঘুম এলো না ! ঘাসের শাখাপ্রশাখায় সে উড়ে বেড়ালো, ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ালো সারারাত, খুব পরিশ্রম করলো তবুও ঘুম এলো না কিছুতেই। ঘাস ফড়িংটা জানে যাদের সহজে ঘুম আসে তাদের ওপর ভাগ্য দেবতা প্রসন্ন।

অশ্রুলতা

অশ্রুলতা বাঁধের গায়ে কোপ বাঁধ ভেঙে যায় অচিরে আমি গোপন করি চোখ, আগলে রাখি ঢেউ পাছে কোদালের দৃষ্টি পড়ে অশ্রুলতার  পবিত্রতা নষ্ট হয়। রক্ত পাথর রক্তকে জমাট বাঁধতে দিলে তার শোভা প্রবালকেও হার মানায়। আমার কন্ঠে যে হার দেখে তুমি অভিভূত হয়েছিলে প্রথমবার, বলেছিলে সুন্দর! সে তো প্রবাল নয় রক্তপাথর। সীমা ঘোষ দে

বিরামচিহ্ন

 বিরামচিহ্ন সেদিন সংক্রান্তি ছিল, আলো আবছা হওয়ার পর শব্দতরঙ্গে মিলিয়ে গেল শাঁখের ফুঁ। বনতুলসি বলল, "তুমি পবিত্র নারী তাই তোমাকে আমি গাছ বলেই ডাকবো" আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম, আসলে মনে মনে অঙ্ক কষছিলাম, সব গাছেরই তো শাখাপ্রশাখা থাকে, আমার মতো কজন আর এক ডালে বাঁচে! সব ঘরেই উৎসব হয় তাই বলে সব উৎসব কি আর সব ঘরে কুলোয়? তুলসি তলায় প্রসাদ খেতে আসা লাল পিঁপড়েটা শুনে নিয়েছিল মনের কথা আহার ফেলে বলল, "অনন্ত এ পথ চলা, সব স্মৃতিই একদিন আবছা হয়" যে যাই বলুক আমি জানি, রোজকার এই চলমান পৃথিবীতে তার মুখ এক মুহূর্ত হলেও বিরাম চিহ্ন এঁকে দেয়! সীমা ঘোষ দে