গুচ্ছ কবিতা





অনু-পরমানু



১.
হারিয়ে গেছে সোনাকাঠি
আঁচল জুড়ে মৃত্যু রাখি
বেডরুম জুড়ে ইনসোমনিয়া
বোতলবন্দী সুখ
বালিস ছুঁয়ে স্লিপিং পিল
বুক জুড়ে তোর মুখ



২.
এখানে বৃষ্টিতে সব ঝাপসা
যদিও মুষলধারা নয়
ছোট্ট ফোটা ফোটা
যেন অনেকগুলো দুঃখ মিলে
নষ্ট জীবন গোটা



৩.
আকাশ ফুঁড়ে দুঃখ উঠুক যত
হৃদয়ে হোক যতই গভীর ক্ষত
তবুও আমি ভালোবাসবো
জানি আশ্রয় যখন পদ্মপাতা
সুখ তখন টল্ মল্ করবেই





৪.
পেরেক বিদ্ধ যীশু,
ত্রিফলা ক্রুশের মতো আমিও নীরব
কথাদের ছুটি দিয়ে ব্যথাদের দিয়ে ত্রাণ
চোখের তারায় বাঁধবো শিশির,
ভোরাই সুরে প্রাণ





৫.
তোমার চোখে চোখ রেখেছি যবে
বুঝেছি আমার জন্মবৃত্তান্ত
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখেছি যবে
বুঝেছি মরণ তুচ্ছ নিতান্ত






৬.
জানি না চিনির কৌটো দেখলে
কেন তোমার কথা মনে পড়ে
বলতে পারো এমন শীতেও
কেন বুকে মাঝে আগুন জ্বলে?





৭.
শনির বলয়ের মতো একটা আবছায়া গোলোক
তোমাকে আমার থেকে অস্পষ্ট করে রাখে
তোমার আবিষ্কারের উচ্ছ্বাসে
আমি পাশে থাকতে পারিনি
তোমার চোখের অন্ধবিন্দুতে রাখতে পারিনি
একটা জ্বলন্ত মোমবাতি,
চলাচলের পথে বিছিয়ে দিতে পারিনি
কৃষ্ণচূড়ার মোড়ক
বলতে পারো এত নেতিবাচতকা নিয়ে
এক জীবনে কতগুলো শ্রাবণ পার হবো?




৮.
আমার কার্ণিশ জুড়ে লতানো বিদেশি গাছ
কিশোরী মন, ও যখন প্রথম যুবতী হলো
শরীরে সুতোর মতো আকর্ষ,
লজ্জার মতো ভেলভেট রঙা ফুল এলো






৯.
                সূর্য আর চাঁদ আলোর খেলায়
                      পালা করে যায় আসে
                               কৃষক আমি
                    তাই খুঁজে চলি নতুন জমি

     ফসল ফলাতে হবে
নিজ পরিশ্রমের দু মুঠো অন্ন
        সে যে পরমান্ন





১০.

তোর জীবন জুড়ে ছুঁয়ে থাক
                            ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ
জন্ম হল বৃন্তচ্যুত আপেল আর
                         মাটির অভিকর্ষজ টান





১১.

পলাশ-পাখি, রক্ত শাখী
                           শিশির ভেজা চোখ
মন্দবাসা অলীক আশা
                             তাসের ঘরে জোঁক




১২.

বুক ভাঙলে কবিতা আসে
                             ঘর ভাঙলে গল্প
চাঁদ ভাঙলে জ্যোৎস্না আসে
                           শরীর ভাঙলে শিল্প






১৩.
                                           
   প্রেম আর কি এমন হাতি ঘোড়া
                   দুটো ঠোঁট
           ছুয়ে থাকা দুটো অধর
        আর দু চারটে আড়মোড়া







১৪.

                 আকাশ ভেঙে বৃষ্টি এল
            বাতাস ভেঙে প্রেম
       তোমার ছবি খুঁজছি আমি
     শূন্য ফটো ফ্রেম 






১৫.

                
আমার ব্যক্তিগত স্বপ্নে
তৃতীয় চতুর্থ ব্যক্তির আগমন সহ্য করেছি
শুধু তুমি ভালো থাকবে বলে

আজ তুমি ভালো নেই বললে
লক্ষ লক্ষ রাত অপচয়ের হিসেব চাইবে




১৬.


ফুলেরা প্রকাশিত হতে চাইল
হেসে হেসে গান শোনাতে চাইল ভ্রমর
কারণ পোকায় খেয়ে নেওয়া ছাদের সবথেকে
কমবয়সী গাছটা আজ আরোগ্যলাভ করেছে
মেলে দিয়েছে পাতার ডালি কিন্তু কে জানত
ঘাতক সময়ের বুকেই কুঠার লুকিয়ে !




১৭.


ভালোবাসি বললেই রেগে ওঠে ঘর-বার
বলে, শুধুই কি ভালোবাসা নাকি আরো কিছু আছে?
মনে পড়ে আমার খারাপবাসাটুকুও গচ্ছিত
তোমারই কাছে !





১৮.

ফিঙে রোদ, ঝিঙে বাতাস সবাই জানে
প্রেম বলে কিছু ছিল না আমার, ছিল শুধু
প্রকাশিত পরাজয়।







১৯.

অন্তরালের প্রদীপখানি, নিভিয়ে দিলে যেদিন তুমি
আলোর অভাব সেদিন থেকেই প্রকট বলে জানি



২০.


এ বছর যতখানি বদলে গেছ তুমি
ততখানিই মাটি কুপিয়ে আমি রবিশষ্য বুনেছি
এখন দেখার তোমার বদলের রঙ খাঁটি
নাকি আমার কুপিয়ে ফেলা মাটি !


২১.

ঘুম পাখি না ফুল, 
এই বিতর্কে তুমি ফুল বলেছ বরাবর
আর আমি পাখি কারণ তোমার চোখে
সকাল ফোটে, পাপড়ি মেলে আলো
আমার চোখে ফাঁকি সবই
কেউ বাসেনি ভালো।



২২.

ক্যালাঞ্চু বন বসন্তের দুপুর
আমাকে ততখানি উন্মুখ করেনি কখনও
যতখানি করেছিল, তোমার ফিরিয়ে দেওয়ার শব্দ


২৩.

সলতেটা পুড়ে গেল
বিনিময়ে সারা সন্ধে একটু আলো পেলাম
তারপর, পোড়া দেহে অনেকখানি অন্ধকার















                               


       
               
     
                                 


       
                     

                            

Comments

  1. অসম্ভব সুন্দর একেকটি অনুকোবিতা। দূর্দান্ত শব্দচয়ন যেমন ইনসোমনিয়া, ভোরাই, আকর্ষ যেগুলো কবিতাগুলোকে অনেক উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেছে।



    যদি নিজের গল্প হয় তাহলে আবার বলি স্লিপিং পিল খাবেন না। লাইট থেরাপি র মত কিছু থেরাপি র সাহায্য নিতে পারেন। চা কফি ও বন্ধ।
    কবিতার শেষ লাইনে কোন প্রিয়জনের কথা যেন ঘুমের শেষ চেষ্টা।



    বারংবার অশ্রুর সাথে বৃষ্টি র তুলনা দুর্দান্তভাবে কবি তুলে ধরেছেন। আর জীবন টা নষ্ট হলে এত দূর্দান্ত কবিতাগুলি কী?



    এই কবিতাটা আমায় গুরুদেবের কথা মনে করিয়ে দিল -
    "... সখী ভালোবাসা কারে কয়
    সে কি কেবলই যাতনময়..."
    এই কবিতায় কবি পদ্মপাতায় জল এর সঙ্গে সুখের তুলনা করে মন ভরিয়ে দিয়েছেন।



    কবিতাটি অনেক দুর্দান্ত উপমাতে ভর্তি। তবে প্রভাতী সুরে প্রাণ এর ব্যাপারটা ঠিকবুঝলাম না। আর এরকম মৃত্যুচিন্তাজনক কবিতা পড়লে খুব কষ্ট লাগে।



    আহা! মাত্র চার লাইনে এত সুন্দর ভালোবাসার কবিতা কীটস ও বোধহয় লিখে যেতে পারেননি। দুঃখজনক কবিতার থেকে আপনার কলমে ভালোবাসার কবিতা অনেক বহুমুখী মাত্রা পায়।



    যার কথা ভাবেন সে খুব মিষ্টি বুঝি? আর শীত বুঝি খুব দুঃখজনক? ফাজলামির জন্য মার্জনা প্রার্থনা করি।



    দূর্দান্ত কবিতা। অসম্ভব সুন্দর উপমায় ভর্তি।
    "তোমার চোখের অন্ধবিন্দুতে রাখতে পারিনি একটা জ্বলন্ত মোমবাতি"
    এই একটি লাইন আপনার
    লেখার প্রতি আমার শ্রদ্ধা অনেক গুন বাড়িয়ে দিল।
    আর শ্রাবণের কথা? প্রতি বছর ই বাইশে শ্রাবণ আসে আর যায়। আমরা কি কিছু করতে পারি?



    ছোট গাছের সঙ্গে মনের জীবনচক্র সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত। গাছের রোদ্দুর এর প্রতি আকর্ষণ এবং বংশবৃদ্ধির জন্য ফুল সব সফল ভাবে কবিতার মাধ্যমে প্রকাশিত।

    কবির এই অনুকবিত সম্ভার আমাকে সত্যিই চমৎকৃত করেছে।
    ভাল থাকবেন। সুখে থাকবেন। লিখতে থাকবেন।
    এবং স্লিপিং পিল খাবেন না। :)

    ReplyDelete

  2. আমি প্রতিবার মুগ্ধ হই
    মনে হয় চেনা কোনো আলো
    তবুও আঁধারে রয়ে যায় কথাগুলো
    যেমন প্রদীপের নীচে কালো।

    ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন।💐

    ReplyDelete
  3. প্রতিটি কবিতায় সুন্দর

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিচ্ছেদের কবিতা

ভাঙন

বিষণ্ণতার গল্প

কবিতা

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

লক্ষ্মী ঝাঁপির ধান

প্রেমের কবিতা