আধুনিক কবিতাগুচ্ছ
রিপু
জন্ম কোনও বিশেষ দিন নয় তবু মনে পড়ে
সুযোগ পেয়ে আলো-আঁধারে কারা যেন ছিঁড়ে নিয়েছিল নাড়ি, সেদিন থেকে বিহ্বল আমি
সূঁচ সুতো দীক্ষা নিয়েছি, গ্রহণ করেছি সেলাইবৃত্তি
কঠোর অনুশীলনে জেনেছি রিপু যত নিপুণ হয়
সূঁচ ততই খাদক হয়ে ওঠে।
আকাঙ্ক্ষা
আকাঙ্ক্ষিত উঠোন চেয়ে রইলো
শিউলি গাছের প্রস্ফুটিত শাখার দিকে
লাজুক সাদা কমলা ফুলেরাও
চোখ নামিয়ে রাখল মাটির বুকে
অথচ মূঢ় আমি, সাহায্য করতে যত বার গোড়ায় দাঁড়িয়ে ঝাঁকানি দিয়েছি ততবারই ফুলের পরিবর্তে ঝরে পড়েছে পাথর।
ছায়া মানুষ
প্রিয় মানুষ, উচ্চাশা নেই তোমার কাছে কারণ দীর্ঘদিন আমার ছায়ার পাশে হেঁটে যায় আরও একটি ছায়া। ছায়াটি বক্র, খতিয়ে দেখলে বোঝা যায় বাঁট সমেত একটি ছাতা কেউ ধরে রেখেছে মাথার ওপর আর রোদ থেকে বেঁচে যাচ্ছি আমি। মাঝে মাঝে বৃষ্টি ভিজব সাধ হয়, অবিচ্ছেদ্য বাঁধন খুলে আদুল পা খুঁজে নেয় ঘাসের পিঠ। ঠিক তখনি পিছু পিছু দৌড়োয় ছাতা হাতে একটি ছায়া। প্রিয় মানুষ, উচ্চাশা নেই তোমার কাছে শুধু বলার ছিল গর্ব গভীর হলে অহং মনে হয়।
দরিয়া
থেমে গেছি মাঝ দরিয়ায়
সামনে এলোমেলো ঢেউ, অচেনা
পিছনে উন্মত্ত তরঙ্গ আমার চেনা জানা
দুর্বার আকর্ষণে সামনের ঢেউগুলো টানে
মনে মনে ভাবি বিষও যদি হয় তবু
এ নীল বড় সুন্দর !
পিছুটান বলে ; শিথিল হলেও
আমি কি নিরাপদ নই?
সংকট
আপনি আগুনকে ভয় পান?
আপনি তো বরফকেও ভয় পান !
আপনি ডাঙাকে ভয় পান আবার জলকেও
আপনি শুধু ভয় পাননা পায়ের তলার এক বিঘৎ মাটি আর মাথার ওপর একহাত শূন্যকে
তাই যখন যে অবস্থানে থাকেন আপনার চোখ শুধু
ওঠানামা করে একবার আকাশ একবার মাটি
দূরের দৃষ্টি, কাছের দৃষ্টি, কোনোটাই যাচাই করা
হলো না আপনার, এ জীবনে !
উষ্ণতা
শূন্য চরাচর, অদূরে একটি পাথুরে টিলা। অনেক উঁচুতে ঘোলাটে বেগুনি রঙের মৃতপ্রায় একখানি আলো টিম টিম করে জ্বলছিল সারারাত, তার নিভু নিভু শিখায় এক শীতার্ত পেঁচা বেঁচেছিল জীবনের আরও কিছু ঘন্টা, শেষ নিঃশ্বাস উড়ে যাওয়ার আগে সে বলেছিল, আগুনের চেয়েও মানুষের শ্বাস উষ্ণ, অলীক অহংকার বিসর্জন দিয়ে তাই চিরকাল প্রিয় মানুষকে ছুঁয়ে থাকতে হয়, হৃৎপিণ্ড ক্রমশ ঠাণ্ডা হয়ে এলে অন্যের ওপর ভরসা করতে নেই, নিজের কবর নিজেকেই খুঁড়ে নিতে হয়।
প্রতিটা কবিতাতে অনুভূতির ছোঁয়া স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়েছে। প্রতিটা কবিতার শেষের লাইন বা শেষের দুই লাইনে একটি করে মেসেজ আছে যা সুন্দর ভাবে মন ছুঁয়ে যায়।
ReplyDelete