মাকড়সা আধুনিক সম্পর্কের কারিগর

ভালোবাসা জটিল নয়, সরলরেখার মত সোজা একমুখী। অজস্র বিন্দু থাকে একটি সরলরেখায়। প্রতিটা বিন্দু থেকে একটা করে বৃত্ত আঁকা যেতে পারে, আর প্রতিটা বৃত্ত থেকে একটা করে আস্ত পৃথিবী। সেই পৃথিবীকে আপনার পড়ার টেবিলে দাঁড় করিয়ে অনায়াসে ঘোরাতে পারেন সূর্যের চারিদিকে, ইচ্ছে হলেই ফ্রিজ থেকে একটা বড় সাইজের লাল রঙের আপেল বের করে আপনি সূর্য বানাতে পারেন। কিন্তু জটিল হল সম্পর্ক। সম্পর্ক মাকড়শার জালের মত জটিল এবং সূক্ষ্ম, যা একমাত্র মাকড়শা নিজেই বুনতে পারে। এমন কোনো দক্ষ, বড় কারিগর নেই যে একটা জাল বুনে দেয় হুবহু মাকড়শার মত।

আমি যখন ভালোবাসায় ছিলাম তখন আমার একলার ছিলাম। কল্পনায় সুখ পেতাম, স্বপ্নে দেখে ব্যথা পেতাম । একদম ব্যক্তিগত অনুভব । দাতা এবং গ্রহীতা দুটো রোল একলাই প্লে করতাম সুতরাং দুটোই আদর্শ চরিত্র, অস্কার পাওয়ার মত।

যখন সম্পর্কে এলাম তখন অন্যজনের ভাবনা ফসল হিসাবে পেলাম। ভালো ফলনে গোলা ভরালাম। অনাবৃষ্টিতে অভাব সহ্য করলাম। অতিবৃষ্টিতে ভিজলাম। একটা অদৃশ্য শৃঙ্খল তৈরী হল দুজনের মাঝে। এখন আমি ভাবছি, সে আমার পাশে বসে মুখোমুখি চেয়ে। সত্যি বলছি রিল কেটে যায় যেন দূর থেকে ডিরক্টার বলে, কাট ! কাট !

শুধু ভাবনায় থাকুন, শুধু ভালোবাসায় থাকুন। জানবেন দুধে ভাতে আছেন। কিন্তু সম্পর্কে আসলেই জানবেন মাকড়শার জালের মধ্যে পড়ে গেছেন। আপনি নিজে জাল কাটতেও পারবেন না আবার বুনতেও পারবেন না, কারণ এখানে শিল্পী একজনই তার নাম ভগবান অথবা মাকড়শা।

Comments

  1. Somporko joteel holeo tomar expression kintu take visualize korte ekdom choukhosh! Beche thak tomaar lekhaa. Egiye jaak ei pawthcholaa... kothao amaar hariyejawar nei manaa mone mone...
    Apurbo awnubhuti eto sohoje likhefyelle? Kurnish tomai!

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা আমার কো-টিচার..
      ভালোবাসা রইলো ।

      Delete
  2. সাহিত্যিক এর দুর্দান্ত লেখা পড়ার পর কিছু সংযোজন করার ইচ্ছা প্রকাশ হল। সাহিত্যিক যদিও অনেক উচ্চমানের ও উচ্চমানের ভাব প্রকাশ করেছেন এবং আমি জানি না এই সংযোজন করার ইচ্ছাটা আমার কতটা যৌতিক। তবু কিছুটা অধিকারে এবং কিছুটা অনধিকারে এই লেখা।

    সম্পর্ক সত্যিই মাকড়শার জালের মত। কখনো তা হয়ত দেখে মনে হয় ঝুলঝারু দিয়ে সরিয়ে ঘর সাফ করি। আবার কখনো যেন তা অনেকদিন ধরে আঁকড়ে রাখে যে সেই টান ছাড়ানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে।

    মাকড়শার জাল তৈরী হয় তাদের লালা দিয়ে। আর মানবদেহে ও একফোঁটা রক্ত যতটা টান সৃষ্টি করে তার থেকে অনেক বেশি টান সৃষ্টি করে এক বিন্দু লালা। তাই বোধহয় সাহিত্যিক এখানে রক্তের সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কের তুলনা করেন নি। বরং মাকড়শার জালের কেন্দ্রবিন্দু তে থাকা প্রত্যেকটি মানুষ তাদের ছড়িয়ে থাকা সম্পর্কে এমন জড়িয়ে পড়ে যে বেরোবার সুযোগ খুব কম হয়ে ওঠে।
    কিন্তু মাকড়শা কি করে জালের ভিতর অবলীলায় ঘুরে বেড়ায়?

    এটা বৈজ্ঞানিক রা বলে মাকড়শার জাল নাকি স্টীল এর চেয়ে ১০০ গুন শক্ত। আমি তাদের সাথে পুরোপুরি একমত। নইলে মাত্র কয়েকদিনের সম্পর্ক কখনো কখনো কেন এমন হয় যে তার স্মৃতি রোজ সকাল - সাঁঝ - রাত তাড়া করে বেরায়?

    ReplyDelete
  3. আপনার বিস্তারিত মতামতে সমৃদ্ধ হলাম। ধন্যবাদ নেবেন।

    ReplyDelete
  4. তথ্যবহুল, যুক্তিনির্ভর কিন্তুু ভিতরে এক কবিতার নদী শুয়ে আছে।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে