বাতাস পুরুষ



১.


এই যে একখানি কথার পর আজ এত দীর্ঘ বিরতি এমন নিঝুম ঝুম চাষ, নিঃসঙ্গ উঠোন, একলা শালিক এমন তো ছিল না আগে

যখন আকাশে তারা ছিল কথার পিঠে কথা ছিল

আজ তোমার শরীরে শাসকের হাত

         যতবার তোমাকে ছুঁয়ে যায় অন্যনারী
                   আমার আংটিতে বিষ জমা হয়

আমি বুঝতে পারি, তারা খসা আসলে পুর্ণজন্ম





২.


ভূমিকম্প আমার যমজ ভাই, আমি যখন যা বলি ও তাই করে। আজ প্রথম ফিরে এল মুখ কালো করে

বলল, তোকে ভালোবাসি বোন তাই পারলাম না
ঘরখানি ভেঙে দিতে। আমি রাগে আগুন চোখে বললাম, মিথ্যে ! আসলে ওই পুরুষটা তোকে কিনে নিয়েছে সততা দিয়ে, ওই নারীটা দাদা ডেকেছে বাচ্চাটা ভেবেছে তুই ওর মামা, ব্যাস তুই গলে গেছিস মোমের মতো! ভুলে গেলিস আপন বোনকে

ভূমিকম্প বলল লক্ষী বোনটি, তুই জানিস না

ঘর ভেঙে গেলে মানুষ গাছ তলায় থাকে। গাছ তলায় কোনো দেওয়াল নেই, তাই মানুষ আরো কাছাকাছি আসে, নিবিড় হয়। তার থেকে থাক ছাদ থাক দেওয়াল, থাক দেওয়ালের ওপারে পুরুষের নিঃশ্বাস এপারে নারীর বিশ্বাস



৩.


প্রতিটা হতাশা-ফুল লালচে কিংবা নীলচে

রোজ ফোটে নক্ষত্রের মতো
তাই বুঝি তুমি আছো আমার অন্তরঙ্গ জুড়ে
প্রতিটা হতাশা-ফুল, রুপোলি কিংবা সোনালী
রোজ ফোটে শালুকের মতো
তাই বুঝি তুমি আছো আমার জলতরঙ্গ জুড়ে
প্রতিটা হতাশা-ফুল জানি তোমার পরাগ পেলেই    
একদিন জরায়ুতে আলো হয়ে ফুটবে 



৪.


তোমার,

মাথার উপর নীল ছাদ
কেউ কেউ আকাশ বলে ডাকে
আমি বলি মস্ত ঘুড়ি
লাটাই আমার হাতে

তোমার,

পায়ের নীচে গালিচা পাতা
কেউ কেউ মাটি বলেই চেনে
আমি বলি মস্ত ডিঙা
ওই যে চাঁদ বেনে

তোমার,

শরীর ঘেঁষে পাশে পাশে
সৈন্য সেপাই হাঁটে
লোকে বলে গাছ ওদের
আমি বলি মস্ত দেওয়াল
বিভেদ ডেকে আনে



৫.


 বাতাস পুরুষ,

আমাদের একটাই জীবন, একবারই মৃত্যু
এই একটা জীবন আর একটা মৃত্যুর মাঝে
কোনো ড্যাস চিহ্ন নয় পুরোটাই থাক আঁকিবুকি
যেন খুব ভিড়ে মানুষের কালো কালো মাথা 


৬.


ফিঙে পাখির ফেরিঘাট

                  গাঙচিলে গঙ্গা
চোখ জুড়ে চিল ওড়ে
                       তিলবুক 
                    কাঞ্চনজঙ্ঘা 

একজোড়া চুমু ঠোঁট 

                 অধর জামদানী
বুক পকেটে নতুন নোট
        প্রেম খানদানি

শালিকের শাখা জুড়ে

       বসন্ত বিলাস
কাকের কপালে নীড়ে
  কোকিলের আবাস


৭.

       
বাতাস পুরুষ, তুমি সহজ সুরে বললে
আমরা দুজনে একান্তে কোথাও বেড়াতে যাবো
আমি দৃঢ়ভাবে বললাম, এ প্রায় অসম্ভব !

তুমি কারন জানতে চাইলে

আমি গঙ্গার দিকে আঙুল তুলে দেখালাম
তুমি অবাক হলে

পরকীয়া পরজিবী

আমরা মানুষকে ভালোবাসি
আমরা একে অপরকে ভালোবাসি
আমাদের দুজনকেই মানুষ ভালোবাসে
আলাদা আলাদা ভাবে
এক সাথে, এক ফ্রেমে
কেউ আমাদের ভালোবাসবে না কোনোদিন
তাই নিভৃত জঙ্গল, উত্তাল সমুদ্র
আমাদের একফ্রেমে প্রবশাধিকার দেবে না কখনও
ফ্রেম ভরাতে X Y Z আমাদের লাগবেই !

তারচে আমরা থাকবো লোকারণ্যে

আমরা থাকবো নিন্দায় চর্চায়
আমরা থাকবো একে অপরের ঘুমে



৮.


মাঝে মাঝে দেখতে সাধ হয়

          আমি মৃত্যুর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকলে
তোমার বুক কেমন ধারা কাঁপে

এ পূর্ণ বসন্তে, এটিই আমার প্রিয় খেলা


তাই মালদা-হাওড়া এক্সপ্রেসটাকে প্রশ্রয় দিয়েছি

আসতে দিয়েছি ঠিক আমার নাক বরাবর 
দেখেছি তুমি শিউরে উঠেছো
প্রবল ঝড়ে মায়ের তুলসী মন্ডপের ক্ষীণ প্রদীপের শিখার মতো তোমার বুকের আলোটা
কেঁপে কেঁপে উঠল বার বার


৯.


আজকাল দেশ রাজ্যের খবর রাখি না

আমার ভিতরবঙ্গের ডুয়ার্স
আর তরাই নিয়েই ভরে থাকি
তুমি এখন অফিসে, অন ডিউটি
বোধহয় টেবিলে হাত রেখে শীতের রোদ
আর পাহাড়ের দিনগুলোর কথা ভাবছো
বোধহয় বললাম কারণ তুমি ভীষণ অলস
তবে আমি নিশ্চিত,
এই মুহূর্তে তুমি আমাকেই ভাবছো
কারণ আমার হাত থেকে ঘন ঘন বাসন পড়ছে
আমিও নদীতে ছিপ ফেলেছি
অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে
অপেক্ষা করছি কখন ফতনা নড়ে উঠবে
তোমার চোখের তারা গঙ্গা জলের মতো ঘোলাটে কিছুতেই গভীরে দেখা যায় না
ভাটার সময় দেখলে মনে হয় গঙ্গা গৃহী
অথচ জোয়ারে দেখলে মনে হয় যাযাবর
জোয়ার এলে তোমাকে বাতাস-পুরুষ মনে হয়
ভাঁটায় তুমি গৃহপালিত পুঁইডাঁটা
তবে সময় হলো জাদুকর
ঘড়ির কাঁটা বৃদ্ধ হলে পুঁইডালে জমাট বাঁধে লোহিত কনিকা। মানুষ নাম দিয়েছে মিচুরি
আমি বলি পুঁইফল, ভিতরে সুষুপ্ত বীজ
গভীরে জীবন্ত প্রাণ  



১০.


বৃষ্টিপাখির মেঘলা ডানা

উঠোনময় জল
বাতাস বন্ধুর শরীর খানা
বারিশ টলমল
গোল বৃষ্টি ,ত্রিভুজ বৃষ্টি 
বৃষ্টি আয়তাকার
ব্লাউজ ভিজছে ,বুক ভিজছে
ক্লিভেজ একসাকার
অধর কাঁপছে ,চিবুক কাঁপছে
কাঁপছে রেন কোট
বাতাস বন্ধুর পিছল বুকে
এগিয়ে যাচ্ছে ঠোঁট



               




Comments

  1. দূর্দান্ত দশটি কবিতার সম্ভার। পড়ে ভালো লাগল কিন্তু প্রচন্ড বেদনাদায়ক লাগলো কয়েকটি।



    প্রচন্ড ভালোবাসার মানুষের থেকে যখন জোর করে আলাদা হতে হয়, তখন এরকমই কষ্ট হয়, আমি বুঝি।
    আপনার কবিতায় এটা খুব প্রানবন্ত হয়ে ফুটে উঠেছে।



    এই কবিতাটি অতি উচ্চমানের কবিতা। সহজ ভাষায় কঠিন পরিস্থিতিকে আপনি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।



    হতাশা ফুল - এই কবিতাটি নিয়ে বলার কিছু নেই। আদিমতা ও তার ফসলকে এত অনয়াসে আপনি তুলে ধরেছেন যে এটি অনিন্দ্যসুন্দর হয়ে উঠেছে।



    আপনার মানসলোকে এত দূর্দান্ত বিষয় কি করে তৈরি হয় তার রসায়নটা কি জানতে পারি? অন্তমিল সমেত এই কবিতাটি বিভাজনকে স্পষ্ট করে তুলেছে।



    অল্প কথায় জীবনকে উপভোগ করার এবং তার জন্য আফসোস না করার কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছেন। কিন্তু আমার এই কবিতার থেকে একটা হতাশা ও চোখে পড়ল।



    এই কবিতার শুরুতে জীবনের ভালোটা উপভোগ্য করে তুলেছেন এবং তারপর আপনার কবিতার ধরনের মত এক মোচড়ে হতাশা নিয়ে এসেছেন। অনবদ্য কবিতা।



    সেই ভাল X Y Z - এর বদলে লোকের ভীড়ে হারিয়ে হারিয়ে নিজেদের ভাবনাটা নিজেদের মনে রেখেই জীবনের পথে চলাই উচিত। দরকার নেই ফ্রেম ভরানোর, মনের ফ্রেম এ একে অপরকে বন্দী রাখাই ভাল।



    এই খেলাটি আমার মোটেই ভালো লাগে না। এই খেলার জন্যই আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়েছি। এই খেলা আমায় অনেক কাদিয়েছে। কবিতাটা সুন্দর ভাবে লেখা হলেও তুলসিতলার প্রদীপ যেন কোনোদিন না নেভে।



    অনবদ্য কবিতা আরেকটি আপনার মানসলোকের দূর্দান্ত ফসল। সময় ময় এ কবিতায় আপনার জাদুকরী। বুঝতে না পারলে পুঁই ডাটা নইলে পুঁইফল। :)

    ১০

    সুন্দর ছন্দ ও অন্তমিল এর সাথে শেষ কবিতা আপনার বাতাসবন্ধুর সাথে বর্ষায় ভিজে রোম্যান্স। তবে এই বৃষ্টি আমার মনে হয় মনের আনন্দের বৃষ্টি।

    দশটি অসাধারণ কবিতা আপনি অনবদ্য ভাবে সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। এই কবিতা বিচার করার ধৃষ্টতা নেই আমার তবে আমার মতে তৃতীয় কবিতাটি সেরা।
    একটি আফসোস রয়েছে, গত দুটি কবিতায় আমার মন্তব্য পড়েছেন কিনা তা আমি বুঝতে পারিনি। হয়তো আমার মন্তব্য পছন্দ হয়নি বলেই কোন প্রত্যুত্তর দেননি।
    ভালো থাকবেন। সুখে থাকবেন। আর এরকমই সুন্দর লিখতে থাকবেন।

    ReplyDelete
  2. অশেষ ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষা করি আমি। অনেকদিন কোনো খবর পাইনি । আপনিও ভালো থাকুন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে