প্রেমের কবিতা - ৪





প্রেম ও পথ

আজ সাড়ে তিনশো বছর
এই সিটটা দখল করে আমি বসে আছি
একটুও বদল নেই বর্ধমান জংশনের
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভিড় ঠেলে
একলা হতে চাওয়া প্রতিটা বিবাগি মানুষ
স্বছন্দে আটচালা নির্মান করেছে
শিকড় বিছিয়ে দিয়েছে মাটির রন্ধ্রে
কেউ জানতে চায়নি
আমার প্রেম ও পথের নাম
তবু আমি বলে গেছি
তোমার পায়ের পাতায় আমার জলছাপের গল্প
শুধু বদলে গেছে অপেক্ষার ঘড়িটা আর
প্ল্যাটফর্মের মাটি ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়া
ট্রেনগুলির নাম 

স্টেশন মাস্টারের ঘর থেকে ঝাঁসিগামী
'প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম এক্সপ্রেস'
নামটা উচ্চারিত হলো
আমার মনে পড়লো,
তুমিও লক্ষীবাঈকে ভালোবাসতে
নিঃসন্তান নারী বুক দিয়ে আগলে রাখতে চেয়েছিল ঝাঁসি, তুমি প্রাণপন করেছিলে
সেই নারীকে পূর্ণতা দিতে
আমি তখনও এই সিটটা দখল
করেই বসে ছিলাম

'বোলপুর কবিগুরু এক্সপ্রেসে'র খবর হলো
আমি এক নিমেষে তোমার বুক ছুঁয়ে
পৌঁছে গেলাম খোয়াই এর তটে
বনময়ূরীর পালকের ফাঁকফোকর দিয়ে
তাকালে দেখা যাবে শান্তিনিকেতনে
এখন শীত এসেছে
কুয়াশারা রোদে পিঠ দিয়ে চুল শুকোচ্ছে
লালমাটির ক্ষয়ীভবন,
খোয়াই এর অগ্নিপরীক্ষা, নোবেল চুরি
এসব ঘটনা প্রবাহ পৃথিবীর সকল সংস্কৃতিমনস্ক মানুষদের তোলপাড় করেছে
আমাকে পারেনি, আমি তখনও
এই সিটটা দখল করেই বসে ছিলাম

'দেওঘর কোলকাতা প্যাসেঞ্জার' এর
খবর হলো, স্টেশনের দক্ষিন দিকের বটগাছ থেকে এক ঝাঁক ধূসর রঙের পাখি উড়ে গেল
হঠাৎ একটা দমকা বাতাস
তোমার চেক শার্টের গন্ধ বয়ে নিয়ে এল
এই প্রথম কেঁপে উঠল আমার বুক
আমার অচল পা দুটোতে বেজে উঠলো
পথ চলার ইচ্ছে, আমি বুঝলাম
সাড়ে তিনশো বছর পর হলেও তুমি এসেছো





নির্দল


যারা কথায় কথায় রহস্য করে

তারা হিলিয়ামের মতো হালকা
ফুড়ফুড়ে মেজাজে গ্যাস ভর্তি বেলুন যেমন
আমি তাদের দলে নই
আসলে আমি কোনো দলাদলিতে নেই
আমি নির্দল, আমি মই চিহ্ন
একা থাকলে স্টেশন মিস করি
শুধু এই কারণেই তোমার সাথে
ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম




 চাবি


সহজ হলে অনুভূতিগুলো লুকানো যায় না

অনুভূতিগুলো সহজে প্রকাশ করলে
মানুষ হ্যাংলা ভাবে
তাই জোর করে শরীর ও মনের সিংহদ্বারে
তালা দিয়েছি
চাবিটা ছুঁড়ে দিয়েছি কোপাই এর জলে
একবার দেখি কোনো এক আবেগী পুরুষ
অমাবস্যার গভীর রাতে জল তোলপাড় করে
চাবিটা খুঁজে বের করেছে
আমি চমকে গেলাম 
মুখোমুখি, আমি সে আর কোপাই
সে শুধু স্মিত হেসেছিল
সে হাসির অর্থ আমি বুঝি 
বোধহয় বলতে চেয়েছিল এবার কি হবে?





Comments

  1. ক্ষমা করবেন সাড়ে তিন দিন পরে মন্তব্য করার জন্য।
    দূর্দান্ত তিনটে কবিতার সম্ভার। প্রেমের কবিতা গুলো পড়তে পড়তে কবিতা গুলোর প্রতি প্রেম এসে গেল। আমি ভাবতাম প্রেমের কবিতা বুঝি কঠিন শব্দে ও দুর্বোধ্য ভাষায় লেখা হয়। কবিগুরুর লেখাই বোধ হয় এর কারন। আপনি সহজ ভাষায় এত অনবদ্য লিখে আমার সব ভুল ধারণা ভাঙিয়ে দিলেন।

    প্রেম ও পথ

    এই কবিতাগুচ্ছ র সেরা কবিতা এটা। ভালোবাসার জলছাপ, আর কবিগুরুর মিশ্রণে অনবদ্য প্রেমের দ্রবণ হয়ে উঠেছে এটা। সহজ ভাষায় উৎকর্ষতা প্রাপ্তি করতে এর খামতি নেই। প্রতিটি ট্রেনের নামের সঙ্গে অনবদ্য রোমান্টিক দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন আপনি। সারাক্ষণ মনে হচ্ছিল যেন জীবনানন্দের বনলতা সেন এর সিক্যুয়েল পরছি - " হাজার বছর ধরে আমি ..."

    নির্দল

    এই কবিতাটি যেকোন পুরোনো প্রেমের স্মৃতি উস্কে দিতে বাধ্য। হালকা আমেজে সহজ কথায় অল্প কথায় একটা নিপাট সুন্দর প্রেমের কবিতা। এত দূর্দান্ত লেখেন কীভাবে?

    চাবি

    কোপাই এর জলে নেমে অমাবস্যার রাতে সেই চাবি কোন ঠাকুর ছাড়া কেউ খুঁজে বার করতে পারবে না। এ ঠাকুর আপনার ঠাকুর আমার ঠাকুর রবি ঠাকুর। কিন্তু কঠিন থাকলেই কি সবসময় অনুভূতিগুলো লুকোনো যায়?

    শেষের কবিতাটার শেষে একটু সংযোজন করতে ইচ্ছে হচ্ছে। মাফ করবেন।

    সেও বুঝেছিল তোমার চমক
    বলেছিল-তোমার প্রেম তোমার রবে
    যা অনুভূতি যা আছে সবে
    তোমার মনের ভিতরে বাসা বাঁধে
    তোমার দুঃখতে অবিরাম কাঁদে
    এমন কে আছে ভবে ?

    অসাধরণ কবিতাগুলি পড়ে সত্যিই মন ভাল হয়ে গেল। আপনার কলমে ভালোবাসার কবিতা দুঃখের কবিতার থেকে বেশি ভাল লাগে, আগেও বলেছি, আবার বলছি।
    ভাল থাকবেন। সুখে থাকবেন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল। লিখতে থাকবেন।

    ReplyDelete
  2. মন্তব্যটি পড়ে মুগ্ধ হলাম। প্রতি মন্তব্য করেছিলাম। হয়তো টেকনিক্যাল ফল্টে পোষ্ট হয়নি।
    মাফ করবেন। ভালো থাকুন।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে