গুচ্ছ কবিতা- ৪টি






অ-সুখে


১.

সারারাত শরীরে কালাজ্বর। মনে হয়েছে কেউ আমাকে বাক্স বন্দি জোঁকের ভিতর আঁটকে রেখেছে। গলা শুকিয়ে গেছল, একঢোঁক জল চেয়েছি জোঁকের কাছে। ওদের কান নেই, শুনেনি আমার ডাক। সমব্যথী বোতল নিজেই এগিয়ে এসেছে, কম্পনরত হাত তবু খুলতে পারেনি ছিপি

জ্বর হলে আমার খুব কষ্ট হয়, চোখের কোণা থেকে ছলকে ওঠে নোনাজল। বার বার হাঁতড়েছি সেল ফোন, ফোনের ভিতর একটা লক্ষ্মী পেঁচার নম্বর ফোনের ভিতর অভিজাত ফার্মেসি

জ্বর হলে কে যেন বিছানার পাশে আয়না রেখে যায়।



২.

সেদিন সংক্রান্তি। আলো আবছা হওয়ার পর শব্দতরঙ্গে মিলিয়ে গেল শাঁখের ফুঁ-এর ছায়া
বনতুলসি বলল, তুমি পবিত্র নারী তাই তোমাকেও আমি গাছ বলেই ডাকবো

আমি সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়লাম

আসলে মনে মনে কড় গুনে অঙ্ক কষছিলাম
সব গাছেরই তো শাখাপ্রশাখা থাকে
আমার মতো কজন আর এক ডালে বাঁচে !
সব ঘরেই উৎসব হয় তাবলে সব উৎসব কি আর সব ঘরে কুলোয়?

তুলসিতলায় নকুলদানা খেতে আসা লাল পিঁপড়েটা
শুনে নিয়েছিল মনের কথা
আহার ফেলে বলল, অনন্ত এ পথচলা
কিন্তু যে যায় বলুক আমি জানি রোজকার চলায় ওর মুখটা একবার হলেও বিরাম চিহ্ন এঁকে যায়।



৩.

আমার একটা গোপন চতুর্ভূজ ছিল, তার ওপর আটচালার মতো একটি ত্রিভূজ বসিয়েছিলাম
ঠিক ঘরের মতো দেখতে লাগত

নাম দিয়েছিলাম মলম ঘর

যত বড়ই ক্ষত হোক ব্যথার আঁচল বিছিয়ে
শুয়ে পড়লে শরীর কুসুমজল হয়ে যেত নিমেষে
আমার সাহস বেড়েছিল খুব, জোর বেড়েছিল আরও বেশি, অহংকারে চোখে ফুটেছিল স্পর্ধাফুল

একদিন মা দুর্গার বোধনলগ্নে মলমঘরের ত্রিভুজ অস্বীকার করলো চতুর্ভূজের সম্পর্ক, বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল দুজনে, আমার কথা কেউ ভাবল না




৪.

আজ কথারা প্রকাশিত হতে চেয়েছিল
কারণ পোকায় খেয়ে নেওয়া ছাদের সবথেকে কমবয়সী গাছটা আরোগ্যলাভ করেছে
কিন্তু কে জানত ঘাতক সময়ের বুকে কুঠার লুকিয়ে



Comments

  1. কি সাদৃশ্য! আমিও কয়েকদিন ধরে জ্বরেই ভুগলাম আর আপনার ও কবিতার নাম অ সুখে। আর এখানেও সেই জ্বরের গল্প। আপনার কলমে চারটে কবিতাই অতুলনীয়। প্রত্যেকটাই একটা করে বার্তা দেয় পাঠকের কাছে।



    এমনি পড়লে মনে হবে শুধু জ্বরের গল্প। কিন্তু ভেতর থেকে মনে হয় সমাজের ভাইরাল ফিভার। মানুষকে রোগের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলে এখানে মনে হয়েছে। শেষ লাইনটা দুর্ধর্ষ। সমাজের প্রতিচ্ছবি অনায়াসে ফুটে উঠেছে এই অসামান্য উপমায়।



    আপনার চিরাচরিত সাধারণ ভাষায় ফিরে আসতে দেখে খুব ভাল লাগলো। সহজ ভাষায় অসাধারণ লাইন " সব ঘরেই উৎসব হয় তাবলে সব উৎসব কি আর সব ঘরে কুলোয়?" মন কেড়ে নিল। কার মুখ তা জানি না তবে হালকা অভিমান এই কবিতায় দেখা যায়। দূর্দান্ত লিখেছেন কবিতাটি।



    কবিতাটি অসামান্য। প্রথম দেখায় মনে হবে আধুনিক কবিতা কিন্তু আসলে সেটা নয়। "দুজনে" শব্দটা না থাকলে বোঝাই যেত না। এটি কি আপনার বা অন্য কারও জীবনের কোন গোপন ক্ষত? (উত্তর দেওয়া বাধ্যতামূলক নয় ।) আঘাত তারপর সেরে ওঠা তারপর আবার কষ্ট এই কবিতায় ফুটে উঠেছে। শেষ লাইনটি খুব কষ্টের। বোধনেই বিসর্জন !
    লেখাটি হৃদয় ছুয়ে গেল।



    এই অনুকবিতাটি সম্পুর্ন আধুনিক কবিতার মত। সময় ও গোপনীয়তার এক অসামান্য ডুয়েল। আমার ব্যক্তিগত পছন্দের তালিকায় এই ধরনের অত্যাধুনিক কবিতা খুব পেছনের সারিতে যায় যদিও তার মানে এই নয় যে কবিতাটি খারাপ। কবিতাটি খুবই সুন্দর লেখা হয়েছে। মাত্র দুটি যুক্তাক্ষর দিয়ে আধুনিক কবিতা লেখা খুবই কঠিন কাজ। আর আপনি সেই কঠিন কাজটাই সহজে করে দেখিয়েছেন। কবি তোমারে সেলাম।

    আজ প্রতিটা কবিতা মানুষের কবিতা কিন্তু বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে। অসাধরন জাদুকরী লক্ষ্য করা গেল আপনার কবিতাগুলির মধ্যে।
    শুভ বিজয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা নেবেন। ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। লিখতে থাকবেন।

    ReplyDelete
  2. শুভবিজয়া💐

    আপনি এত কিছু বলে যান তাই আমি চুপ হয়ে যায়। কবিতায় থাকুন। পাঠক কবির সবথেকে কাছের।

    ReplyDelete
  3. আচ্ছা পরেরবার থেকে কম করে লিখব।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে