অণু কবিতা - ১



১.

উল আনতে বলেছিলাম
শীতের শোয়েটার বুনবো
তুমি আনলে বিষাদ-গোলা
আমি সোজা বুনি উল্টো বুনি
যতই বাঁধি কাঁটায় কাঁটায় ততই বিষাদ
মাফলার হয়ে যায়




২.
ফুলের দিকে চেয়ে দেখলাম সুখ ছুঁয়েছে আঁখি
গাছের দিকে চেয়ে দেখলাম ছায়া রেখেছে পাখি
কিন্তু তোমার মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন জাগলো মনে
চোখের ভিতর অস্ত্র রাখলো কে?



৩.
স্বাভাবিক সম্পর্ক স্বাভাবিক বাঁধের মতো
আকৃতি যেমনই হোক আটকায় তো জলই
অথচ বইতে পারায় জলের ধর্ম
মানুষ কি কখনও বুঝবে না, হিংসে জমাতে
জমাতে সে জলকেও বিধর্মী করেছে !



৪.
ছোট্ট দুধ-সাদা ফুল,
ঘুমোলে পরে ফোটে নিশিরাতে, ওর নাম স্বপ্নজল
ঘুমের ঘোরে গন্ধ ছড়ায় বিছানা বালিসময়
ঘুম ভাঙলেই রোদ ঢেলে দেয় সুখের জোছনায়



৫.
জল সাক্ষী আমি কাঁদিনি
যার বালিস চুরি গেছে সেই মেয়েটা করুণ সুরে ফুঁপিয়েছিল



৬.
যার ক্ষত দেখলে বুক কাঁপে
তার উঠোনে দেবদারু গাছের বেড়া
ছায়ার সীমান্ত নেই তাই মলম হাতে
এগিয়ে যায় বিভোর প্রেমিক


৭.
অপ্রিয় সংকট, তোমার বিস্তার এখনও শিকড় গাঁথেনি, মাটির চাদর এখনও লাল হয়নি অভিমানে। সময় তোমার খারাপ চিরকাল তাই বলে কী তুমি হাসবে না একদিনও? তুমি কী বাঁচবে না বাঁচার মতো?




৮.
সকালের আকাশ বড় ধূসর যেন সূর্য দেখেনি কোনোদিন, একটি কৃত্রিম নক্ষত্রের ব্যবস্থা করতে হবে, নকল হলেও অন্তত আলো চাই নচেৎ ধূসর বাড়তে বাড়তে ডিমের কুসুমের মতো ঘোলা হবে পৃথিবী।


৯. 
আলো, তোমাকে আমিই জ্বেলেছি তবুও শাসন মানোনি, ছড়িয়ে পড়েছো অন্ধকারে



১০.
ব্যক্তি প্রচণ্ডভাবে ইতিবাচক হলে
                                           তবেই মন বুঝবে
আমাদের যন্ত্রনার কোনো নার্স নেই
কেবল গুদামঘর আছে


১১.

মন খারাপে যমুনা নদী জলকে বলে আড়ি
পিছন ফিরেই হারিয়ে গেল প্রেম কুয়াশার বাড়ি





১২.
ভাষা, প্রিয় আমার
তুমি আমার সহনশীলতা বাড়াও
যেন কঠিন ধ্বনি উচ্চারিলেও
শান্ত থাকে চোখ, সদয় থাকে বুক
কুঁচকে যাওয়া ত্বকের নিচেই
তুফান এসে জমুক



১৩.

জ্বরের ঘোরে

আমার তো মরুময় স্থলজ সঙ্গম
ফুল ফোটে না,
ফল ধরে না একেবারে !

তোর জানি জলজ বিছানা
তোর বৌ এর শরীরময় শালুক ফোটে।


১৪.

নদী ও নৌকার তরল সম্পর্কে
আমিই চিরকালের মাঝি



১৫.

প্রেম আর কী এমন হাতি ঘোড়া
দুটো ঠোঁট , ছুঁয়ে থাকা দুটো অধর
আর দু চারটে আড়মোড়া


১৬.
(সম্পর্ক)


মা - আঘাতের শব্দ জুড়ে ওষ্ঠ্যবর্ণ‌।

বাবা- ছায়াদের কাছে চিরঋণী এক ছাতা বিক্রেতা।

দাদা-কালবৈশাখীর আমতলা জুড়ে প্রিয় শৈশব।

ভাই- অকারণ বুদ্ধ্যাঙ্ক যাচাই এর একক।

স্ত্রী-রুটি স্যাঁকার গন্ধ।

স্বামী-মধ্যবিত্ত যার বেতন কম লোন বেশি।

প্রেমিক- পেশায় বাতাস বিক্রতা

প্রেমিকা-ঘাম মোছার রুমাল



১৭.

সোনাঝুরি বন, অন্ধ ঝিঁঝি পোকা বলেছে
এখানে ভীষণ গুমোট, ডাকে বৃষ্টি পাঠিও


১৮.

ক্ষয়ে যাক পরমায়ু 
তবু জেনো অসুখ পারেনি হারাতে 
হেরেছি সুখের কাছেই


১৯.


মন খারাপের উঠোন জুড়ে রোদ উঠেছে খুব
ব্যথার দুয়ার, ভুলের পাহাড়, মেঘ করেছে চুপ



২০.

কূল ভাঙনের নদীর তীরে ঝড় উঠেছে সেকি 
বালির বাঁধ, চওড়া কাঁধ, লুটিয়ে পড়তে দেখি



২১.

দীর্ঘজীবি হোক নদীর সংসার

মাছেদের নষ্ট দুপুর কষ্ট রাত




২২.

নৈঃশব্দের ভিতর কোদাল হাতে এক মানুষ

খুঁড়ে চলেছে নিজেরই কবর। এও এক দৃঢ়তা

নিজের শরীরকে নিজেই সমাধি দেওয়া।



২৩.

রঙতুলি শুয়ে গেলে

যে বিষাদগুলি জেগে ওঠে

ওরাই আমার ঠোঁট ছুঁয়ে হাসির মতন ফোটে



২৪.

উৎসুক চোখের তারায় তুমি বিঁধে গেছ 

আয়নায় তাই নিজের বদলে তোমার মুখ দেখি!


২৫.

সরলরেখার মতো নদী,

তুমি জানবে কি করে প্রতি বাঁকে কত ব্যথা থাকে!



২৬.

পাহাড় ডিঙিয়ে যে ট্রেনটা সুদূর ছুঁয়েছিল
সে খবর পায়নি, সেই মেয়েটির স্পর্ধা অনেক বেশি
যে প্রেমের জন্য প্রথমবার চৌকাঠ ডিঙিয়েছিল



২৭.
নিয়তির স্থির জানলা জানতে পারেনি
স্বপ্ন দেখা এক জোড়া চোখ কতখানি অস্থির!


২৮.

বাসর সাজানো হয়নি বলে শুকনো পাতায় শরীর ঢেলে ঘুমিয়ে গেল তিতির। ঘুম ভেঙে সে দেখল 
জেগে সারা গায়ে আদর লেগে, সঙ্গীহীন গহীন বন
একলা পোড়ে স্মৃতিমন


২৯.
সম্পর্ক নিভে গেলে স্মৃতি জ্বলে ওঠে হীরক খণ্ডের মতো
কিন্তু তার জন্য ভিতর ঘরের সব আলো আগে থেকেই 
নিভিয়ে রাখতে হয়।

৩০.


বাঁক

সরলরেখার মতো নদী,
তুমি জানবে করে প্রতি বাঁকে
কত ব্যথা থাকে!


৩১.

আলোর শেষ বিন্দুটুকু নিভে গেছে তবু উষ্ণ শ্বাস
দীর্ঘ হতে হতে স্তব্ধ ঝিল হয়ে বাঁচে।


৩২.
তোমাকে দেওয়া কথায় ঘুন ধরে না, বঁটিতে কাটে না, আগুনে পোড়ে না। কোনো এক অজ্ঞাত ব্রত কথার জোরে মৃত্যুও ফিরে যাচ্ছে রোজ।


৩৩.
ওগো পাখি, এত যে আকাশ আঁকো নিশিদিন
অবকাশ হলে শিরিষ ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে
একদিন ঘুমিও, ডানার ব্যথা জুড়োবে।

৩৪.
মুদ্রার ওপিঠে বরফ জমেছিল
এপিঠ বুঝলো নৈঃশব্দ্য মানে কেউ কোত্থাও নেই


৩৫
বিজয়ার ডাক এলে প্রাণের প্রতিমাকেও বিসর্জন দিতে হয়, এটাই কালের নিয়ম। আবার কাশবনে সুখ ফুটবে বুকের মাঝে আবাহনের শব্দ বাজবে। ততদিন দরজা খোলা থাকলো, তুমি এসো সময় করে।


৩৬.
আমার সমস্ত ব্যথার গায়ে মৃত্যুর প্রলেপ দিও তুমি
সকল জরা থেকে মুক্ত করে যমুনার কালো জলে
ভাসিয়ে দিও দেহ!

৩৭.
তবু অক্লান্ত সে ডুবে গেছে জনহীন বিরল আঁধারে।

৩৮.
অনেকখানি ব্যথা পেলে নির্ভেজাল একা হওয়া যায়
পরিচয় হয় নিজেরই সাথে! 

৩৯.
কতখানি বদল গেলে আয়নাও চিনতে পারে না প্রতিকৃতি? এর উত্তর আজও দাওনি তুমি! আমি বাতাসে ঘ্রাণ নিলে বুঝতে পারি, তোমার মতো মানুষটির গন্ধ তুমি মুছে ফেলেছো একেবারে!





                                                   


                                        









Comments

  1. দুর্দান্ত লাগল অনুকবিতাগুলো। প্রত্যেকে যেন বলছে ওকে ছেড়ে আমায় দেখ। এত ভাল লেখেন কী করে?

    শেষের দুটো কবিতায় অনুভূতি ও অধিকারবোধ প্রচণ্ড ভাবে ফুটে উঠেছে। এরকমই লিখে আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করুন। ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। লিখতে থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অসংখ্য ধন্যবাদ। কবিতায় থাকুন💐

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিচ্ছেদের কবিতা

ভাঙন

বিষণ্ণতার গল্প

কবিতা

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

লক্ষ্মী ঝাঁপির ধান

গুচ্ছ কবিতা

প্রেমের কবিতা