প্রেমের কবিতা - ৯

একগুচ্ছ প্রেমের কবিতা


প্রেমের কবিতা


জলের চেয়ার


জল থেকে ছেঁকে নিয়েছি সমস্ত ডুবে যাওয়া
                                               ভেসে যাওয়া
দোষগুণ নির্বিশেষে জল এখন শুধুই তরল
বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নাকে কেউ ব'লো
কলসি আর ভাসবে না গাঙে
দেখা করার অন্য অজুহাত খুঁজতে

ইচ্ছে করলে তুমি চেয়ার পেতে বসতে পারো জলে
যেভাবে পড়ার টেবিলে বসো, চিৎকার করে মুখস্থ করো বাসি পড়া

পরখ করো, জল নড়বে না এতটুকু ভয় দেখাবে না একদম

অনেক হয়েছে, এবার শান্ত হও
তুমিও আর তোলপাড় ক'রো না জল
চাবুক চালাতে হয় তরলে নয় পাথরে চালাও






 সীমান্তে


যে ছবিটা ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত ছুঁয়েছিল
যে ছবিটা কাঁটা তারে ফুল ফুটিয়েছিল
যে ছবিটায় লুকিয়েছিল একমুখ না কামানো দাড়ি
চোরা পথে বর্ডার ডিঙিয়ে দেশ বদলের রহস্য‌
যে ছবিটায় দুটো ঠোঁটের মাঝে একফালি আকাশ

তোমার সেই ছবিটাই ঈদের দিনে সূর্য ডুবেছিল ‌

তোমার সেই ছবিটার জন্য আমি একটা কাঁচের ফ্রেম কিনেছিলাম। ছবিটা যে জ্যান্ত ছিল বুঝতে পারিনি, বালিশের তলা থেকে মাঝরাতে উধাও। ভোরের আলোয় দেখি, তোমার সেই ছবিটা তিমিরের যমজ বুকের ভাঁজে
মালিকানার লড়াই-এ গো হারা ক্লান্ত আমি
                                         হাইকোর্ট থেকে ফিরছি




অবিন্যস্ত


এক শীত দুপুরে মেঝেতে অশ্রু বিছানো ছিল
জলবালিসে থুতনি রেখে নিজেকে কুমিরের মতো আরামপ্রিয় হয়ে মনে হলো

ঘুমিয়ে গেলাম, ঘুমের ভিতর দেখলাম তোমার অবিন্যস্ত অসহায়তার ওপর একটিও স্তুতিবাক্য নয় আস্ত পূর্ণচ্ছেদ এঁকে দিয়েছিল ভোরের প্রথম পাখিটা

তোমার গতিপথ গোল ভেবে বলেছিল, মানুষ কেন এত অসহায় হয় গো? বিশাল এ পৃথিবী থাকতে কেন সে নিজের অন্ত্রের চারদিকেই ঘুরে মরে? আমরা পাখিরা নিজেকে খোঁজার খেলায় অবিরত লাট্টুর মতো ঘুরি না বরং নীল আকাশের পারতে পারতে ডানা মেলি।

দেখলে তো দুর্বল চিত্ত হলে পাখিরাও দোষারোপ করে! এবার বিচ্ছেদ ঘনিয়ে এলে তুমি আর চোখ লুকিও না

           শুনেছি ভাঙনে বুক পাতলেও উচ্ছ্বাস






মন্থন


মনে হতো মাছেদের ভালোবাসা হারিয়েছি
কিন্তু বুকের ভিতর জলের শব্দ পাই
ঢেউ ওঠে, পাড় ভাঙে
পাড় ভাঙার শব্দ হিল্লোলিত হয় ছলাৎ ছলাৎ
মাটির নিচে জল, জলের নীচে আবার মাটি
তলিয়ে গেছি এতই গভীরে যে পৃথিবীর সর্বনিম্ন স্তরও খুঁড়ে ফেলেছি কড়ি আঙুলে

আমার প্রেম অপ্রেম দুইই এখন নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে মাটির ছায়ায়। মুখের ওপর মুখ রেখে গালের ওপর গাল রেখেও যেদিন কান্না পেয়েছিল, বুঝেছিলাম সুখ ঝুরো বালি সরকে যাবে আঙুলের ফাঁক দিয়ে

ভালোবাসা মানে শুধুই মন্থন




দূর-সম্পর্ক

   

পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সম্পর্ক ভাঙার শব্দ শুনলেই আমি অস্থির হয়ে পড়ি
মনে হয় কত স্মৃতি ছিল পায়ে পায়ে
এখন নেলপালিশ পরা পা দুটো
নিশ্চিত অন্য পা জোড়াকে মিস করছে
এখন নিশ্চয় জুতোর রুট বদলে গেছে
এক ছাতার তলায় ছিল দুটো মাথা
ছায়াদের আলাপনে ছাতার আনন্দে দিন কাটতো
এখন ছাতাটা নিঃসঙ্গ
কেবল রোদে পোড়ে, জলে ভেজে বারো মাস
ঠোঁট আড়ালের কাজ তার সমাপ্ত হয়েছে

ভালো থাকুক সব প্রেমিক প্রেমিকারা
বিনিময়ে দূরত্ব নদী হয়ে বয়ে যাক
আমার আর তার মাঝে



পড়ে দেখুন
গুচ্ছ কবিতা






























Comments

  1. দুর্দান্ত লেখা প্রত্যেকটি কবিতা। দুটো মনে হল আগে পড়েছি তবুও চিরনতুন। আপনার কলমে যেন সরস্বতী স্বয়ং বিরাজ করে।

    সীমান্তে কবিতাটি মন ছুয়ে যায়। আর জলের চেয়ার এ একটা অন্তর্নিহিত বার্তা দুর্দান্ত ভাবে প্রকাশ করেছেন।

    অসম্ভব সুন্দর একটি সংকলন প্রেমের দিবসে প্রকাশ করেছেন। আরো কবিতার জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। লিখতে থাকবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কি যে বলি আপনাকে?
      ভালো থাকুন, কবিতায় থাকুন।

      Delete

Post a Comment

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে