স্কুলবেলা ও রঙিন ইরেজার





আমার ইরেজার জমানোর শখ ছিল
তখন প্রাইমারি স্কুলে, ছোট্ট হ্যাণ্ডব্যাগ ভর্তি থাকত নানা রঙের ইরেজারে। পেন তখনও যেহুতু আমার ব্যবহারের তালিকায় ছিল না তাই ইরেজার গুলোকে ব্রহ্মার  আশ্চর্য সৃষ্টি বলে মনে হতো আমার। মজার ব্যাপার হলো মাস্টারমশাই এর দেওয়া পড়ার দাগ আমি অনায়াসে মুছে দিতাম, মুছে দিতাম বন্ধুর আঁকা নিখুঁত পাখির ডানা কিন্তু সমস্যা হতো ছাপটা নিয়ে। বহুবার আমি ধরা পড়ে গেছি শুধু ছাপ রয়ে গেছে বলে, ছোট্ট মস্তিষ্কে চাপ নিয়েছি, ভেবেছি ছাপটুকুও যদি তুলে ফেলা যায় তবেই আসল ম্যাজিক।

আমি অঙ্ক বই নিয়ে বসতাম
ইরেজার ঘষে তুলে দিতে চেষ্টা করতাম অঙ্কের সংখ্যা আর চিহ্নগুলোকে। লেখা অঙ্ক আমার খুব প্রিয় কিন্তু তাতে সংখ্যা আর সংকেতের ভিড় আমার একদম ভালো লাগত না। এমন বহুবার হয়েছে পুরো অঙ্কটাই আমি লিখে সলভ করেছি দিয়েছি শুধু সংখ্যার মধ্যে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ ইত্যাদি হিজিবিজি সম্পর্কগুলোর সদ্ভাব রাখতে পারিনি। অঙ্কের মাস্টার হেসে বলতেন, "তোকে দেখলে অবাক লাগে। কী করতে হবে তুই জানিস, কীভাবে করতে হবে তাও তুই জানিস কিন্তু তবুও করতে পারিস না আসলে তোর মধ্যে 'X' নেই।" আমি তখন 'X'-কে চিনতাম না তাই X= বুদ্ধি ধরে নিয়েছিলাম। পরবর্তীকালে অবশ্য অঙ্কের বিভিন্ন জায়গায় আমি 'X' কে দেখেছি যদিও আলাপ হয়নি কখনও ওই চোখের দেখাটুকুই সম্বল। ধীরে ধীরে আমি নিজেও বুঝতে পেরেছি আমার দ্বারা অঙ্ক হবে না কারণ এটা প্রমাণিত এককভাবে আমার শুধু অঙ্কতেই বুদ্ধি নেই। হয়ওনি, সে অন্যকথা

এখন বড় হয়ে আমি গভীরভাবে বুঝেছি কেন অঙ্ক আমি করতে পারি না, শুধু অঙ্ক নয় কেন বাংলা ব্যাকরণ প্রায়ই আমার ঘুলিয়ে যায়, কেন আমার চারপাশের সম্পর্কগুলোর মধ্যে সুস্থ সম্বন্ধ গড়ে ওঠে না? উত্তর একটাই, ওই যে 'X' এর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়নি যদিও ছাপ সহ দাগ মোছার ইরেজার আজও অনাবিস্কৃত তবু আমি জেনে গেছি ছাপ হল দাগের স্মৃতি

তারপর স্কুল শেষ হয়ে গেছে একদিন। আমার শিক্ষা অপূর্ণ রয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় শুধু স্রোত ভেঙেছি। বদলে গেছে শখ বুঝিনি ছোটোবেলায় হ্যাণ্ডব্যাগে জমানো ওই ইজেরাগুলোই মুছে দিয়েছে আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতও।

Comments

Popular posts from this blog

বিচ্ছেদের কবিতা

কবিতা

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিষণ্ণতার গল্প

জীবনের কবিতা

ভাঙন

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

প্রেমের কবিতা

বৃষ্টি কুঁড়িগুলো ফুটবে