আধুনিক কবিতা

 





'না '


মা বলে, প্রথম বার 'না' উচ্চারণ করেছিলাম

খাবার দিতে অস্বীকার করে। ভাই-বোন-আত্মীয় আমার অংশের ভাগ চাইলে ঘাড় নেড়ে বলতাম নাঃ

সেই 'না' ছিল ধাতব, স্পষ্ট ঝংকারে কেউ সাহস পেত না আমার খিদে দখলের


বড় হয়েছি, এখন আমার সমস্ত 'না' জিভের নরম ছায়ায় ঘুমিয়েছে অঘোরে তাই ক্ষুধার্ত আমি হাসি

আর আমার ভাগ খেয়ে যায় বাঘের মাসি পিসি







প্রতিবিম্ব


একলা থাকি

সারাদিন জানলা বন্ধ

সন্ধেবেলা সরবে কবিতা পড়ি

পথ চলতি মানুষ তর্জনি উঁচিয়ে

বিড় বিড় করে বলে যায় দুর্বোধ্য


মেঝেতে খেতে বসি, একা

দৃশ্যটি আমার ভালো লাগে না

দ্রুত খাবার শেষ করতে তাই মুঠো মুঠো ভাত

গিলে নিই খাবলে খাবলে


খেতে বসে আজ প্রথম আয়নায়

চোখ গেল, কাঁচের ভিতর ফুটপাত 

আঁৎকে উঠলাম! মনে হলো মানুষে

                                          এভাবে খায় না






আত্মহত্যা


দেওয়াল বেয়ে এক সারি লাল পিঁপড়ে

দ্রুত চলে যাচ্ছিল খাটের তলায় অন্ধকারে

আমি পথ আঁকটাই, ও চেষ্টা করে ঘুর পথে যাওয়ার

আমি আবার ঘিরে ধরি


ওদের মধ্যে সব থেকে বেশিবার যে পিঁপড়েটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল আমি তার নাম রাখলাম আমার নামে, পদবীও দিলাম পূর্বপুরুষের

 

কিছুক্ষন পর যত্ন করে দু আঙুল মানে বুড়ো আর তর্জনির মাঝে শোয়ালাম পিঁপড়েটাকে তারপর চোয়াল শক্ত রেখে টিপে টিপে মেরে ফেললাম






প্রিয় ঘুম


এমনিতে ঘুম আসে না, সাধনা করলে আসে

আমি সাধনা করি কারণ ঘুম আসার পর অসম্ভব রকমের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়


আমার চেতনা নামের পোষ্যটা শীতলতায় ডুবে যায় অন্ধকূপে, রান্না আর খিদে থেকে ছুটি পেয়ে শরীরের

দরকারী স্নায়ুগুলোও ছুটে যায় ধানক্ষেতে


ঘুম এলে আমার ভিতরের সর্বজ্ঞ কবিটা চলে যায় মৃতের দেশে, খুঁজে নেয় লেট সব কবিদের মৃত্যুস্তূপ

দেখে প্রত্যেকেই মারা গেছে অতিশয় ভাবাবেগে





তরঙ্গ


ফোনের ওপারে তুমি

এপারে আমি স্বাভিমান হয়ে গেছি

মাঝখানে চুপচাপ তরঙ্গ। কথা কর্পূর যেন

অসংরক্ষণে উবে গেছে কঠিন

চুপচাপ দীর্ঘ হলে গাভিন হয় নীরবতা




আপেলকথা


তোমাকে ভালো না বাসলে জানা হতো না

পৃথিবীটা বিষণ্ণ আপেলের মতো

দেখে লোভ হয়, লালের লোভ

কামড়ালে বোঝা যায় রঙচটা সাদা



ঝড়


বাইরে ঝড় ওঠে, ক্ষয় ক্ষতি যা হয় বুকের ভিতর

কেউ টের পায় না, অপেক্ষায় থাকি

ত্রাণ তহবিলে তুমি একখানি শক্ত কপাট রেখে যাবে







বান


টিলার ওপর শুখা গ্রাম

আরও ওপরে ঘন জঙ্গল

ওখানে সানাই বাজে, ব্যাঙাচিদের মুখে ভাত


এদিকে সমভূমি পুরুষের বুকের মতো

অতি বৃষ্টি হলে পরে বানে ভেসে যায় 



                                



Comments

  1. চমৎকার লেখার ধরন এবং ধারণা। হৃদয়ে একটা ব্যথা অনুভব করলাম। হতে পারে এটা আপনার অতীত বা সম্পূর্ণ আপনার মনের সৃষ্টি।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

পাখির কাছে স্বীকারোক্তি

বিচ্ছেদের কবিতা

ভাঙন

বিষণ্ণতার গল্প

কবিতা

আধুনিক কবিতাগুচ্ছ

লক্ষ্মী ঝাঁপির ধান

গুচ্ছ কবিতা

প্রেমের কবিতা